অস্থিতিশীল জ্বালানি তেলের বাজার
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১ ডলারেরও বেশি বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে গতকাল পণ্যটির বাজারদর সাত বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে। মূলত সম্ভাব্য সরবরাহ সংকটের উদ্বেগে এমন অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি বিমানবন্দরের কাছে সোমবার ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি গ্রুপ। এতে তিন জ্বালানি ট্যাংকার ট্রাক বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় তিনজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়। ইরান সমর্থিত হুথি গ্রুপের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধ চরমে পৌঁছার আশঙ্কায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে।
এএনজেড রিসার্চের এক বিশ্লেষক এক নোটে বলেন, নতুন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। বাজারে চলমান সংকট আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
গতকাল আইসিই ফিউচারস এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ১ ডলার ৩৭ সেন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৭ ডলার ৮৫ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ১ ডলার ৭১ সেন্ট বা ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৫ ডলার ৫৩ সেন্টে। উভয় বাজার আদর্শের দামই ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন জ্বালানি অবকাঠামোয় আবারো হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে হুথি। জবাবে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার ইঙ্গিত দিয়েছে আরব আমিরাত।
আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি) জানায়, মুসাফাহ ফুয়েল ডিপোয় যে হামলা হয়েছে, তার প্রভাব যেন দেশটির জ্বালানি বাণিজ্যে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখতে একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে পণ্যের সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমসেকের বিশ্লেষকরা জানান, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় তীব্র ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে হিটিং জ্বালানির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এটিও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দিতে পারে। কারণ টানা দুই বছরের লকডাউন ও বিধিনিষেধ বাধা কাটছে। যদিও ওমিক্রনের কারণে নতুন করে আবারো এসব বিধিনিষেধ ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। বিশ্লেষকরা আরো জানান, এ বছরও সরবরাহ ও চাহিদাসংক্রান্ত সংকট লেগে থাকতে পারে।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক সূত্রে জানা যায়, জোটটির কয়েকটি সদস্য দেশ নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে হিমশিম খাচ্ছে। জোটের মিত্র দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস প্রতি মাসে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল। কিন্তু ধারাবাহিকভাবেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে জোটটি। কারণ এখনো মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি অনেক দেশ। বিনিয়োগস্বল্পতা এবং অন্যান্য সংকটের কারণে অনেক দেশই উত্তোলন বাড়াতে পারছে না। তবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২২ এনার্জি আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়বে। এমনকি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের চাহিদার গতিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে সরবরাহ। সংস্থাটির বিশ্লেষকরা জানান, ২০২১ সাল ছিল জ্বালানি তেল ও গ্যাস চাহিদা পুনরুদ্ধারের বছর। কিন্তু ২০২২ সাল হবে জ্বালানি পণ্যগুলোর সরবরাহ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার বছর।