অস্ট্রেলীয় কয়লা আমদানিতে সব বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিচ্ছে চীন

স্টাফ রিপোর্টার

স্থানীয় সব কোম্পানিকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে চীন। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়লা বাণিজ্যে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটবে। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।

চীন সরকার এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বন্দর ও কাস্টমস অফিসগুলোকে এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান কয়লাবাহী কার্গোর অনুমোদন দিতে বলা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চারটি কোম্পানিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানির অনুমতি দেয়। জানুয়ারি থেকেই এসব কোম্পানি আমদানি শুরু করে। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দুই দেশের কয়লা বাণিজ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা স্থবিরতার সমাপ্তি ঘটে। তবে এ বিষয়ে চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

চীন বিশ্বের শীর্ষ কয়লা উত্তোলক ও ব্যবহারকারী দেশ। গত বছর দেশটি ২৯ কোটি টনেরও বেশি কয়লা আমদানি করে। দেশটির শীর্ষ কয়লা লবিং গ্রুপ জানায়, চীনের ইস্পাত উৎপাদক কোম্পানি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় উন্নতমানের অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মাসের প্রধমার্ধেই দেশটি থেকে আমদানি ১০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।

সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ার খবরে অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোয় স্বস্তি দেখা দিয়েছে। ইয়ানকোল অস্ট্রেলিয়া লিমিটেড ও নিউ হোপ করপোরেশনের মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারে লোকসানের হার কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে চীনা ধাতব কয়লার দাম আরো এক দফা কমেছে।

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই চীন ও অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেয় চীন। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ছিল চীনের আমদানীকৃত কয়লার সবচেয়ে বড় উৎস। অস্ট্রেলিয়ার নেতারা বলছেন, কয়লা আমদানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হবে।

চীনের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। কয়লাস্বল্পতায় ২০২১ সালের শেষের দিকে যেভাবে দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউট হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে চায় বেইজিং। দেশটির জাতীয় জ্বালানি প্রশাসন গত ৩০ ডিসেম্বর জানায়, ২০২২ সালে রেকর্ড ৪৪৫ কোটি টন কয়লা উত্তোলন করেছে চীন।

নিষেধাজ্ঞার আগে ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে তিন কোটি টনেরও বেশি ধাতব কয়লা ও প্রায় পাঁচ কোটি টন তাপীয় কয়লা ক্রয় করে চীন। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প হিসেবে ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ামুখী হতে হয়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা ব্যবহারকারী দেশকে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও ইস্পাত উৎপাদনে যে উন্নতমানের কয়লার প্রয়োজন তা মেটাতে পারেনি ওই দেশগুলো।

স্থানীয় বাজারে কয়লার সরবরাহ নিয়ে লম্বা সময় ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে চীন। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বেইজিং। এ পরিস্থিতিতে দেশটির জন্য বড় নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠছে কয়লা।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন। এ লক্ষ্য অর্জনে দেশটির বিদ্যুৎ খাতকে পুরোপুরি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তর হতে হবে। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা প্রায় অসম্ভব। অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটি বর্তমানে কয়লার ব্যবহারকেই সাশ্রয়ী ও প্রাসঙ্গিক মনে করছে। ফলে কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *