অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণ করতে চাইলে যা করবেন
অষ্টগ্রাম হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হতে অষ্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছির নগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা। অষ্টগ্রামের অবস্থান হাওরের মাধখানে।
বর্ষাকাল হলো অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত সময়। চারপাশে যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝেই ছবির মত সুন্দর ছোট ছোট গ্রাম গুলো ভেসে আছে। উত্তাল বতাস, মাঝিদের গান, জেলেদের ব্যস্ততা, ছোট ছোট নৌকায় মানুষের যাতায়াত, সব কিছু মিলিয়েই চারপাশটা হয়ে উঠে দেখার মত। তবে শুধু বর্ষা নয়, যখন পানি নেমে যায় তখন ভিন্ন রূপে এই হাওর জেগে উঠে। ভিন্ন স্বাদ পাওয়ার জন্যে একবার শীতেও
সবচেয়ে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১১০ টাকা। কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা/ইজিবাইক নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট।
এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা, ৮ টা, ৯ টা, ১১ টা এমনি করে ৩ টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ৯০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা। মনে রাখবেন কুলিয়ারচর থেকে অস্টগ্রাম গামী লঞ্চ ট্রেনের সাথে সিডিউল মেনে চলাচল করে। সম্প্রতি কুলিয়ারচর থেকে অষ্টগ্রাম স্পীড বোট চালু হয়েছে, জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় এসব স্পিড বোটে যেতে পারেন। আর দলবেধে গেলে লঞ্চঘাট থেকে পছন্দ মত একটা ইঞ্জিন নৌকা ঠিক করে নিতে পারবেন আপনার প্রয়োজন মত।
শুকনো মৌসুমে চাইলে সড়ক পথে অষ্টগ্রাম যেতে পারেন তবে এর জন্য আপনাকে বাজিতপুর উপজেলায় আসতে হবে। ট্রেনে আসলে ভাগলপুর রেলস্টেশনে নেমে ইজিবাইকে বাজিতপুর আসতে পারেন। যদি বাসে করে আসেন তবে ঢাকা থেকে বাজিতপুরের একটি বিআরটিসি বাস সার্ভিস আছে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জগামী যেকোন বাসে করে কটিয়াদি নেমে বাস স্টপ থেকেই বাজিতপুরের সিএনজি পাবেন। বাজিতপুর বাজার থেকে ইজিবাইক বা সিএনজি যোগে চলে আসুন দিঘির পাড়। ঘাটে নৌকায় ১০ মিনিটে নদী পার হয়ে দেখতে পারবেন ইজিবাইক কিংবা মোটরসাইকেল অষ্টগ্রাম গামী যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে। মোটরসাইকেলে অষ্টগ্রাম যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা লাগে।
যতক্ষণ আপনি নৌকায় ঘুরে বেড়াবেন নিশ্চিত তা আপনার ভালো লাগবে। হাওরের রূপ দেখা ছাড়াও অষ্টগ্রামে দেখার মত আছে ৪০০ বছরের পুরনো
কুতুবশাহ মসজিদ
অষ্টগ্রাম গেলে অবশ্যই দেখে আসবেন। সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যের বৈশিষ্টের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি অষ্টগ্রাম থানা সদরে অবস্থিত।
যদি কোন ভরা পূর্নিমায় হাওরে যেতে পারেন তবে তা হতে পারে আপনার জন্য মনে রাখার মত একটি রাত। নৌকায় ভাসতে ভাসতে চাঁদের আলোয়া গা ভেজাতে পারেন কিংবা পছন্দমতো জায়গা দেখে ক্যাম্পিং করে ফেলতে পারেন। ক্যাম্পিং করতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস তাবু, হ্যামক ইত্যাদি ঢাকা থেকেই সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।
অষ্টগ্রামে থাকার জন্যে ভালো আবাসিক হোটেল এর ব্যবস্থা নেই। প্রথম ও প্রধান জায়গা হলো জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। রুম ভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়া। ডাক বাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো।
০১৭১-০২৯১২২৫ / ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯ এই নাম্বারে ফোন করে কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিন। যদি কোনরকম থাকতে পারলেই হলো এমন মন মানসিকতার ভ্রমণকারী হন তাহলে এছাড়া অষ্টগ্রাম বাজারে কিছু হোটেল আছে এই গুলোতে চেষ্টা করতে পারেন। কিংবা থাকার জন্যে পরিচিত কেউ থাকলে তার সাহায্য নিতে পারেন।
আর ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাও পারবেন। তবে ক্যাম্পিং করার জন্যে ভালো একটা জায়গা নির্বাচন করার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিন।
ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ১৫ বা এর বেশী মানুষ গেলে হয়তো স্থানীয় থানায় ওসির কাছে রিপোর্ট করতে হতে পারে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যদি নৌকায় সারা রাত পার করার ইচ্ছা থাকে তবে যথাযম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন, স্থানীয় কেউ সাথে থাকলে ভাল হয়।
সুত্রঃ ভ্রমণ গাইড