খাদ্যশস্য উৎপাদনে নতুন রেকর্ডের পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার

২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে খাদ্যশস্যের রেকর্ড বৈশ্বিক উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সি (আইজিসি)। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়ে ২২৯ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। আইজিসি সম্প্রতি মাসভিত্তিক খাদ্যশস্যের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, এ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টা ও সরগামের আবাদ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে। শস্য দুটিই মূলত বৈশ্বিক উৎপাদনকে রেকর্ড সর্বোচ্চের দিকে নিয়ে যাবে।

আইজিসি গত মাসে যে পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল চলতি মাসে তা ৯০ লাখ টন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ টন বাড়তে পারে। উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১২২ কোটি টন।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে খাদ্যশস্যের ব্যবহারও রেকর্ড স্পর্শ করতে পারে। সার্বিক ব্যবহার ২ শতাংশ বাড়তে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়বে খাদ্য, পশুখাদ্য ও শিল্প খাতে। পুরনো মৌসুমের মজুদ টানা সাত মাসের মতো কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় এ মজুদ ২ শতাংশ কমে ৫৮ কোটি ১০ লাখ টন। গমের নিম্নমুখী মজুদ এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে যবের মজুদ কমে তিন দশকের সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে মোট শস্য উৎপাদন বাড়লেও গম উৎপাদন ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় ১ কোটি ৯০ লাখ টন কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। যব উৎপাদন কমতে পারে ৯০ লাখ টন। এছাড়া সয়াবিন উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ২০ লাখ টন কমতে পারে।

অন্যদিকে চাল উৎপাদন রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছে আইজিসি। ভারত, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। আইজিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি ৭০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ২ শতাংশ বাড়বে।

আইজিসি রেকর্ড উৎপাদনের কথা জানালেও বিশ্বজুড়ে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি আরো বাড়ার পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূলত এ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যার সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়বে দরিদ্র দেশগুলোয়।

খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বলতে বোঝায় পৃথিবীর বড় একটি অংশে পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়া। কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তির অবসানের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে শস্যের প্রাপ্ত্যতা কমে আসবে, যা স্বাভাবিকভাবে খাদ্যপণ্যের দামকে আরো ঊর্ধ্বমুখী করে তুলবে। ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় সাধারণ মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের সংস্থান করাই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে।

আইএমএফের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‌কৃষ্ণ সাগরীয় চুক্তিটির মেয়াদ না বাড়ায় অনেক দেশেই খাদ্য সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশ ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, সেসব দেশ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে। বিষয়টি খাদ্যনিরাপত্তাকে অনেক বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে। বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখিতার ঝুঁকিও প্রবল হচ্ছে, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে নিম্ন আয়ের দেশগুলো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *